শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস

৩:২২ AM


জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর (ইউএনওডিসি) ১৯৮৭ সাল থেকে ২৬ জুন দিনটিকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসহিসেবে পালন করে আসছেবাংলাদেশেও এ দিনকে কেন্দ্র করে নানাভাবে মাদকবিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়২০০৬ সালের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ লাখ, আর ধারণা করা হয় বর্তমানে এ সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি
এর মধ্যে খুব অল্পসংখ্যকই চিকিৎসা-সুবিধা গ্রহণ করে আর বাকিরা ধাবিত হয় ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকেআবার চিকিৎসা গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা মাদকাসক্তি চিকিৎসার সব ধাপ যথাযথভাবে পাড়ি দিতে না পারে, তারা পুনরায় মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারেএ জন্য প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরিপূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ, যদি তা দীর্ঘমেয়াদি হয় তবু ধৈর্য ধারণ করতে হবে
মাদকাসক্তি চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ রয়েছেসবার আগে জানতে হবে আসক্ত ব্যক্তিটি কী ধরনের মাদকে আসক্ততার অন্য কোনো শারীরিক বা মানসিক রোগ আছে কি নামাদকাসক্তির কারণে বর্তমানে তার কী কী সমস্যা হচ্ছেএর পরের ধাপ হচ্ছে ডিটক্সিফিকেশনবা শরীর থেকে মাদকের ক্ষতিকারক উপাদানগুলোকে দূর করা
এ পর্যায়ে আসক্ত ব্যক্তিকে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, মাদক-নির্ভরতার কারণে যেসব উইথড্রয়ালসমস্যা হয়, এর মোকাবিলা করতে হয়, পাশাপাশি সাইকিয়াট্রিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ওষুধ সেবন করতে হয়এ সময়টিতে আসক্ত ব্যক্তির পুষ্টি নিশ্চিত করা দরকারলক্ষ রাখতে হবে যে তার শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায়এর পরের ধাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেটি পুনর্বাসন ও এর মধ্যে মাদকমুক্ত থাকার প্রেরণা ধরে রাখাএ সময় তাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সহায়তা করতে হয়তার শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করাএ পর্যায়ে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কাউন্সেলিংএই কাউন্সেলিং বা পরামর্শ সেবা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে
অনেকে মনে করে থাকে যে কেবল কাউন্সেলিং দিয়েই মাদকাসক্তি নিরাময় করা সম্ভব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাউন্সেলিং সামগ্রিক প্রক্রিয়ার একটা ধাপ মাত্রএর আগে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে মাদকাসক্তি নিরাময়ের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে আসতে হবে
বাণিজ্যিক প্রচারণার কারণে অনেক সময় কাউন্সেলিংকে একমাত্র চিকিৎসা-পদ্ধতি হিসেবে দেখানো হয়, পাশাপাশি একই ধরনের প্রচারণায় ওষুধ ও চিকিৎসকের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন করা হয়এতে ফল হয় মারাত্মকমাদকাসক্ত ব্যক্তির অভিভাবকেরা ডিটক্সিফিকেশন ও মাদক-নির্ভরতার রাসায়নিক কার্যকারণ দূর করার বিশ্বস্বীকৃত ওষুধভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাদ দিয়ে কেবল কাউন্সেলিংয়ের পেছনে দৌড়ান আর তাঁদের সন্তানের চিকিৎসা হয় আংশিক বা খণ্ডিতফলে আপাতসুস্থ ব্যক্তিটির পুনরায় মাদকাসক্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়, যাকে বলা হয় রিল্যাপ্‌স্‌এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, কাউন্সেলিং এক ধরনের চিকিৎসা-পদ্ধতিতাই দক্ষ, প্রশিক্ষিত বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত উপযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে এ সেবা নিলে তা সুফল বয়ে আনবে নামাদকাসক্তি নিরাময়ে কাউন্সেলিং নানাভাবে দেওয়া যেতে পারেসাধারণত ছয় থেকে আটটি সেশন লাগে, তবে এর বেশিও লাগতে পারেতিন থেকে সাত দিন পর পর সেশন নেওয়া হয় আর সেশনের সময়সীমা গড়ে প্রায় ৪০ মিনিটমাদকাসক্ত ব্যক্তির সার্বিক ইতিহাস গ্রহণ, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করার পর তাকে কাউন্সেলিং দেওয়া হয়একটি ছয় সেশনের কাউন্সেলিংয়ে যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে তা হলো-


প্রথম সেশন
মাদকের কুপ্রভাব
-
ব্যক্তির নিজের ওপর
-
তার পড়ালেখা বা পেশার ওপর
-
বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা পরিচিতজনদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে
-
মা-বাবা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও পরিবারের অন্য সবার ওপর
মাদকের সুফল (?) সে কি ভোগ করছে (মাদক গ্রহণে তার ভালো লাগে কেন)?
মাদকাসক্তি নিরাময়ে তার নিজস্ব কী কী ভালো দিক (যেমন-পারিবারিক সহায়তা, ভালো পরিবেশ, ভালো চাকরি, ভালো একাডেমিক রেকর্ড, অন্য কোনো রোগ না থাকা) আর কী কী দুর্বল দিক (অসৎ বন্ধুবান্ধব, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হওয়া, পরিবারে আরও কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তির উপস্থিতি ইত্যাদি) শনাক্ত করা প্রয়োজন
মাদক নিরাময়ে তার ভালো দিকগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে
দ্বিতীয় সেশন
মাদক-নির্ভরতা কীভাবে হয়
মাদক-নির্ভরতা দূর করতে ওষুধের প্রভাব ও এর প্রয়োগবিধিমাদকাসক্তি সংশ্লিষ্ট জটিলতার (যেমন-এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণ) ঝুঁকি হ্রাস কীভাবে করা যায়
তৃতীয় সেশন
ল্যাবরেটরি পরীক্ষার (ইউরিন টেস্ট) গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তানিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব, এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে
চতুর্থ সেশন
জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরাসুন্দর জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়ামানুষের জীবনে সুস্থ বিনোদনের গুরুত্ব
পঞ্চম সেশন
মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে তার প্রতি অপরের দৃষ্টিভঙ্গি এবং এ বিষয়ে তার মতামতস্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথে অন্তরায় কী কী? এগুলো অতিক্রম করার উপায়
ষষ্ঠ সেশন
বন্ধু, স্বজন, সন্তানের জন্য কী ধরনের দৃষ্টান্ত মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি রাখতে চায়
কী করে মাদককে নাবলতে হবে
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীর পাশাপাশি তার অভিভাবক বা তার স্ত্রী বা স্বামীকেও কাউন্সেলিং করার দরকার হতে পারেকাউন্সেলিং গ্রহণ করতে আসা ব্যক্তি ও তার পরিবারের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করতে হবেআসার জন্য তাদের ধন্যবাদ দিয়ে কাউন্সেলিং শুরু করা উচিতরোগীর সব তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়ে তাকে বা তার পরিবারকে আশ্বস্ত করতে হবেএমনকি নোট নেওয়ার জন্য রোগী বা অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া জরুরিকথা বলতে হবে কম, শুনতে হবে বেশিআর এ শোনাটা যে কার্যকরী ও মনোযোগের সঙ্গে হচ্ছে, তা বোঝানোর জন্য রোগীর বলার ফাঁকে ফাঁকে তার কথার প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, সে যা বলতে চাইছে সংক্ষেপে এর পুনরাবৃত্তি করা প্রয়োজনরোগীর অনুভূতির মূল্যায়ন এমনভাবে করতে হবে, যাতে সে মনে করে কাউন্সেলর তার প্রতি মনোযোগীরোগীকে পরের সেশনের জন্য কিছু হোমওয়ার্ক ধরনের বিষয় দিতে হবে, আর প্রতি সেশনের শুরুতে আগের সেশনটি সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারেমনে রাখতে হবে, কাউন্সেলিং মানে রোগীর প্রতি একগাদা উপদেশ বর্ষণ নয় বরং সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকেই তার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করামাদকাসক্তি চিকিৎসায় কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীমতাই এর সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কাউন্সেলিংয়ের নামে বিভিন্ন স্থানে যে বাণিজ্যিক প্রচারণা ও প্রতারণা চালানো হচ্ছে, সে বিষয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন

Written by

We are Creative Blogger Theme Wavers which provides user friendly, effective and easy to use themes. Each support has free and providing HD support screen casting.

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

© 2013 Effects of Drug Abuse. All rights resevered. Designed by Templateism

Back To Top