মাদকের বিষাক্ত ছোবলে যুবসমাজ ...
বাংলাদেশে গত দু’বছর আগে তৈরি এক সরকারি জরিপে জানা গেছে যে সমগ্র দেশে ১৭ লক্ষ মানুষ
মাদকাসক্ত। চিকিৎসকদের
মতে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষেরও বেশি,
প্যাথেড্রিন আসক্তদের মধ্যে মহিলার
সংখ্যা বেশি।
বেকারত্ব, হতাশা, বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় কৌতূহল মেটাতে ও অসৎ সঙ্গে পড়ে যে মানুষ একবার বা দু’বার মাদকাসক্ত হয়েছে সে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি মাদকের যাদু স্পর্শ থেকে।
বেকারত্ব, হতাশা, বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় কৌতূহল মেটাতে ও অসৎ সঙ্গে পড়ে যে মানুষ একবার বা দু’বার মাদকাসক্ত হয়েছে সে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি মাদকের যাদু স্পর্শ থেকে।
বর্তমান
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে জীবনবিনাশী নীল নেশা
মাদকদ্রব্য। নেশা সর্বনাশা জেনেও মানুষ এর নীল
দংশনে দংশিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীদের জীবনে ড্রাগস
এখন অমোঘ নেমেসিস। ধ্বংসের সলিলে তাদের জীবন বিপন্ন।
এমন
দেশটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকাসক্তির কালোছায়া দেশের নতুন প্রজন্ম
ও তরুণ সমাজকে স্পর্শ করেনি।
বাংলাদেশের
মতো উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশেও মাদকদ্রব্যের উদ্ধত থাবা;
হেরোইন, প্যাথেড্রিন, গাজা, আফিম, চরস, ভাং, মরফিন হাসিস, ইয়াবা ইত্যাদি ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের ঘুমের
ট্যাবলেট।
অধুনা
কোকেন সম্রাটরা আকাড়া কোকেনের সঙ্গে তামাক মিশিয়ে তৈরি করেছে নতুন এক মাদকদ্রব্য। নতুন এ মাদকদ্রব্য ‘বাজুকো’ তখন ইউরোপের বাজারে জমজমাট। হেরোইনের মূল উৎস আফিম। আর
আফিম পাওয়া যায় পপি উৎপাদনের
মাধ্যমে। এশিয়ার তিনটি এলাকায় প্রধানত পপি উৎপাদন করা হয়। এলাকা তিনটি হল গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল,
গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ। কর্কটক্রান্তির উত্তর ১৮ থেকে ২৪ দ্রাঘিমাংশের
মধ্যে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল। এর পরিধি
থাইল্যান্ড, লাওস
ও বার্মা। পপি উৎপাদনকারী গোল্ডেন ক্রিসেন্টের বিস্তৃতি
পাকিস্তান, আফগানিস্তান,
ইরান, তুরস্কজুড়ে।
পাকিস্তানে
উৎপন্ন হয়
সিংহভাগ। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ও গোল্ডেন
ক্রিসেন্টের মধ্যবর্তী অপর একটি নতুন অঞ্চল গোল্ডেন ওয়েজ এর আভাস পাওয়া গিয়াছে। এ অঞ্চলটি ভারত ও নেপাল সীমান্তে। প্রাপ্ত তথ্যমতে যুক্তরাষ্ট্র,
কলম্বিয়া,
গুয়েতেমালা,
জ্যামাইকা,
ব্রাজিল,
প্যারাগুয়ে,
ঘানা, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, দক্ষিন আমেরিকা, পেরু, বলিভিয়া, কোকেন উৎপাদনকারী দেশ, মেক্সিকো, যুগোশ্লাভিয়া, হাঙ্গেরীর সীমান্ত প্রদেশ,
সাইপ্রাস,
ইরান, আফগানিস্তান, ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, লাওস ও অস্ট্রেলিয়ায় আফিম ও হেরোইন উৎপন্ন হয়।
হাসিস উৎপাদনের জন্য জ্যামাইকা,
মরক্কো, জর্ডান, পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল সমধিক পরিচিত। বিশ্বের শতাধিক দেশের ৫০/৬০ কোটি মানুষ মাদকে
আসক্ত বলে বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। ৩৬টি দেশে অধিক ক্ষতিকর মাদক উৎপাদন করা হলেও এর স্থানান্তর প্রক্রিয়া শতাধিক
দেশকে মাদকের লীলাক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশে
গত দু’বছর আগে তৈরি
এক সরকারি জরিপে জানা গেছে যে সমগ্র দেশে ১৭ লক্ষ মানুষ মাদকাসক্ত। চিকিৎসকদের মতে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষেরও
বেশি, প্যাথেড্রিন
আসক্তদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা বেশি। বেকারত্ব,
হতাশা, বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় কৌতূহল মেটাতে ও অসৎ সঙ্গে পড়ে যে মানুষ একবার বা দু’বার মাদকাসক্ত হয়েছে সে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি
মাদকের যাদু স্পর্শ থেকে। তা ছাড়া
চিরন্তন নতুনত্বের নেশা, নতুন
অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ ও আপাত ভাল লাগার প্রেরণার বশবর্তী হয়েও অনেকে
আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
দেশের
বিশেষ সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় অনেকে নিজের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পেরে
হতাশায় ভোগে এবং তা হতে আসক্ত হতে শুরু করে। হেরোইনের
প্রতিক্রিয়া শরীরে প্রবেশ করানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা সুখকর মানসিক অনুভূতি
আসে, এরপরই একটা
চিত্তবিনোদনকারী নির্লিপ্তভাবে আসে যা থাকে ৪-১৪ ঘণ্টা। শরীরে হেরোইনের কার্যকারিতা কমতে আরম্ভ করলে
শুরু হয় এর প্রত্যাহারজনিত অসুস্থতা যা কমাতো অবধারিতভাবে প্রয়োজন হয় পুনরায়
হেরোইন গ্রহণের। প্রত্যাহারের তীব্রতা এতই অসহ্য যে
শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা উপশমের জন্য হেরোইন না পেলে সে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়।
বিশ্বের
মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম মাদকবিরোধী আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। এরপর ১৯৮৭ সালে বিশ্বের ২টি রাষ্ট্র মাদক
প্রতিরোধক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগদান করে। ১৯৮৫ সালে বিশ্বজুড়ে ৫৬৩ মেট্রিক টন হাসিস আটক
করা হয়। কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে
ইরানের প্রয়াত ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ্ খোমেনী ১০০০ জনের ফাঁসি দিয়েছেন।
১৯৮৯
সালের সেপ্টেম্বর মাসে লস এঞ্জেলসে গোয়েন্দা বাহিনী ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ টন
কোকেন আটক করে। ধ্বংস ডেকে আনা ছাড়াও মাদকাসক্তি
প্রচলিত মূল্যবোধ, জীবনশৈলী
ও অর্থনীতির প্রভূত ক্ষতি সাধন করছে। তাই সমগ্র
বিশ্ববাসীকে মাদকবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার করার মধ্যদিয়ে এ ক্ষতিকর নেশার হাত থেকে
বাঁচাতে হবে। নতুবা মাদকাসক্তির ফলে ধ্বংস হবে যুব
সমাজ, বিনষ্ট হবে
আধুনিক সভ্যতা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন