শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ইয়াবাঃ ভয়াবহ সর্বনাশা এক মাদকের নাম

৫:২৩ AM



লাল, গোলাপী, নীল, সবুজ, বেগুনী অথবা সাদা রঙ এর গোলাকৃতি একটা পিলআকৃতি এবং ওজনে যেন শার্টের ছোট্ট একটা বোতামমেথএম্ফিটামিন আর ক্যাফেইন এই দুই উদ্দীপক রাসায়নিকের মিশ্রনে তৈরী এই পিল ইয়ামা (Ya‘maa) নামে ঘোড়ার ঔষধ হিসেবে মায়ানমারের শান প্রদেশে তৈরী হয়েছিল উঁচু পাহাড় বেয়ে ওঠা কিংবা অতি পরিশ্রমের কাজ করানোর আগে ঘোড়াকে এই ঔষধ খাওয়ানো হত১৯৮৮ সালের দিকে থাইল্যান্ড সরকার মেথএম্ফিটামিন নিষিদ্ধ্ব ঘোষনা করার পর অন্য একটা নাম নিয়ে সেই একই মেথএম্ফিটামিন বাজার ধরে রাখেআলাদা কিন্তু কাছাকাছি উচ্চারনের সেই নামটি হল আজকের ইয়াবাআক্ষরিক অর্থে যার নাম পাগলা ঔষধ (Madness Drug)এখন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায়, অলিতে গলিতে উঠতি কিংবা পরিপক্ক বয়সের অসংখ্য নারী পুরুষ, যুবক-যুবতীদের কাছে এক অতি প্রিয় নাম ইয়াবাঅভিজাত এক মাদকপ্রতিবেশী ভারতে এর নাম ভুল-ভুলাইয়ামালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে পরিচিত সাবুনামে, থাইল্যান্ডে এর নাম চোকালি” (Choc alee)বাংলাদেশে এর নাম এলাকা এবং ব্যবহারকারী ভেদে বাবা”, “ইয়াবা”, “পিল”, “গাড়ী”, “গুটি”, “পাগলা”, “বড়িইত্যাদিআরো অনেক নাম থাকতে পারে, আমার জানা নেইচকোলেট বা ক্যান্ডির মত চুষে খাওয়ার পাশাপাশি গিলে খাওয়া যায়, অথবা এলুমিনিয়াম ফয়েলে রেখে আগুলে গলিয়ে এর বাস্প নাকে মুখে টেনে নেয়া যায়বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত এটি ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় তবে বাইরের কিছু দেশে এটা পাউডার বা তরল আকারেও বিক্রি হয়দাম একেবারে হাতের নাগালে

১৯১৯ সালে জাপানে এম্ফিটামিন থেকে ইয়াবার মূল উপাদান মেথএম্ফিটামিন আহরন করা হয়েছিলপ্রথম দিকে এই দুটি রাসায়নিক (এম্ফিটামিন এবং মেথএম্ফিটামিন) মূলতঃ নাকের ছিদ্র খোলা রাখার ঔষধ (Nasal Decongestant) এবং ব্রঙ্কিয়াল ইনহেলার (Bronchial Inhaler) হিসেবে ব্যবহৃত হতদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানী এবং জাপান তাদের সৈনিকদের শ্রান্তি বিনোদনে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে জাগিয়ে রাখা সহ পার্ফর্মেন্স উন্নত করনের জন্য মেথএম্ফিটামিন ব্যবহার করেতবে সামগ্রিক ভাবে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয় জার্মান নাজি (Nazi) বাহিনীযুদ্ধের পর এই ঔষধ সাধারণ জনগনের হাতের নাগালে চলে আসে১৯৫০ সালের দিকে আমেরিকাতে মেথএম্ফিটামিন ট্যাবলেট বৈধভাবে তৈরী হতছাত্র, ট্রাক ড্রাইভার, এথলেট আর খনির মজুররা ছিল এর প্রধান ক্রেতা

যুগ যুগ ধরে বার্মা, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সীমান্তবর্তী Golden Triangle পৃথিবীতে সবচেয়ে লাভজনক এবং কুখ্যাত মাদক হিরোইন উপাদন এবং বিক্রির ব্যবসা করে আসছিলমাদক ব্যবসার টাকায় চলতো ইন্সারজেন্সীআজ সেই একই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ইয়াবাতবে Golden Triangle নয়, একক ভাবে সর্ববৃহ ইয়াবা প্রস্তুতকারী/সরবরাহকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মিয়ানমার (প্রাক্তন বার্মা)১৯৮৯ সালে মিয়ানমারে জন্ম নেয়া ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (United Wa State Army বা UWSA) নামের একটি ইন্সারজেন্ট দল এই ইয়াবা ব্যবসার একচ্ছত্র গডফাদার৯০ এর দশকে মায়ানমার সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত এক শান্তি চুক্তি অনুযায়ী UWSA মায়ানমারে ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করতে পারেসেই ব্যবসা বানিজ্যের আড়ালে চলছে ইয়াবা উপাদনমায়ানমার সেনাবাহিনীর অনেক উর্ধতন অফিসারও সরাসরি এই কাজে যুক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়Jane’s Intelligence Review এর তথ্যানুসারে “ The leading pioneer of the shift into Methamphetamin was Wei Xuegang, a senior UWSA commander”চীন এবং বার্মার সীমান্ত অঞ্চলে UWSA নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যে কেউ UWSAকে চাঁদা দিয়ে ইয়াবা কারখানা বসাতে পারেনএছাড়া লাওসে কিছু তৈরী হয়স্থানীয়ভাবে থাইল্যান্ড, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ইয়াবা বা মেথএম্ফিটামিন তৈরী হয়আমেরিকাতে এটাকে শুধু মেথবলেঅনেকে ক্রিস্টাল মেথও বলে থাকেইয়াবার ফর্মুলা এখন ইন্টারনেটে পাওয়া যায়অতি সহজ কিছু উপকরণ দিয়ে ৩-৪ দিনের ভেতর যে কেউ চাইলে এর ফর্মুলা পরীক্ষা করে বানিজ্যিক ভাবে উপাদনে যেতে পারেপ্রায় ৩০ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি আর উপকরন দিয়ে যে পরিমান ইয়াবা তৈরী করা সম্ভব, তার পাইকারী বাজার মূল্য কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা, খুচরা পর্যায়ে ৩-৫ লক্ষ টাকা হতে পারেতার চেয়েও কম খরচেও চাইলে ঘরে বসে ইয়াবা বানানো যায় আজকাল, তবে জীবন বিপন্ন হবার সম্ভাবনা আছেবাংলাদেশে ২০০৫ -২০০৬ সালের দিকে এই বড়ি আসা শুরু হয়প্রথম দিকে তেমন পরিচিত না হলেও ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে বাড়তে এখন শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছেJane’s এবং আরো কিছু অসমর্থিত সুত্রের তথ্যানুসারে ২০১০ সালের দিকে মিয়ানমারের মংডু শহরে UWSA কর্তৃক ইয়াবা ট্রেড সেন্টার খোলা হয়েছেবাংলাদেশে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে এই ট্রেড সেন্টারটেকনাফ থেকে নাফ নদী পেরিয়ে ওপারে মংডু শহর বেশী দূরে নয়শোনা যায় যে, মংডু শহর থেকে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রতিযোগীতামূলক কম দামে ইয়াবা সরবরাহ করা হচ্ছে আর বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন গডফাদার এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছেনপত্রিকার পাতা খুললেই মোটামুটি সবার নাম জানা যাবে

২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকায় একটা ইয়াবা কারখানা আবিস্কৃত হয়েছিল যার মালিক ছিল প্রখ্যাত এক ব্যবসায়ীর আপন ছোট ভাইব্যবসায়িটি বাংলাদেশে “– ভাইনামে পরিচিতগত ১৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে আমেরিকার ওহাইও স্টেটে একটা ইয়াবা কারখানা আবিস্কার করেছে ফেডারেল পুলিশগ্রেপ্তার হয়েছে মধু দত্ত নামে একজনপুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী যে বাড়িটিতে ইয়াবা কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছিল, সেই বাড়িটি কিছুদিন আগে ১.২ মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়েছে!!! ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আজকাল ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছেসম্প্রতি মায়ানমার থেকে ইসরাইলে ইয়াবার চালান গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে
ইয়াবা খাওয়ার পর কেমন অনুভূতি হয়? এই প্রশ্নটা আমি করেছিলাম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ইয়াবা আসক্ত ছেলেকেতার ভাষায় একেক জনের কাছে এর ফিলিংস একেক রকমতবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব অনুভূতিগুলি একে একে প্রকাশ পেতে থাকেপ্রথমেই একটা আনন্দময় উদাস (Euphoria) ভাব আসে, তার পরক্ষনেই আসে তীব্র একটা উত্তেজনা যেমন হাতের মুঠোয় পৃথিবী ধরে রাখার মত কিছু একটাহট ফ্লাস, মুখ শুকিয়ে যায়, তীব্র যৌন উত্তেজনা হয় কারো কারোঘুম আসে না জোর করেও ঘুমানো যায় নাট্যাবলেট আকারে চুষে খেলে বা পানি দিয়ে খেয়ে ফেললে এটা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে, আর বাস্প টানলে ৮-১০ ঘন্টাদীর্ঘদিনের আসক্তিতে শরীরের চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া, মনযোগ এবং স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ব্লাড প্রেসার উঠানামা, হার্টবিট কমে যাওয়া সহ মারাত্বক হেলুসিনেশন, যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া, উদ্বেগ, নার্ভাসনেস এরকম হাজারো সব সমস্যা দেখা দেয়তারপর আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে হেঁটে যাওয়াপ্রথম দিকে সপ্তাহে ২-৩ টা খেত আমার এই তথ্যদাতা, শেষের দিকে প্রতিদিন ৩ টা লাগতোএখন ধানমন্ডির একটা রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হয়েছে
ঢাকায় কোথায় কোথায় বিক্রি হয় ইয়াবা? সে হেঁসে দেখিয়ে দিল যে তার রিহ্যাব সেন্টারের রাস্তার অপর পাশেও পাওয়া যাচ্ছেআমি একটু চেপে ধরতেই জানালো ঢাকার প্রায় প্রতিটি মহল্লায় পাওয়া যায়তবে কানেকশন থাকতে হবেআর জিনিসটা বন্ধু মহলের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বেশীএক আসক্ত আরেক আসক্তকে এনে দিচ্ছেথাইল্যান্ডে একসময় পেট্রল পাম্প আর হাইওয়ের পাশে মুদি দোকানে বিক্রি হত ইয়াবামায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন চিয়াংরাই এবং চিয়াংমাই রাজ্যে হাজার হাজার চোরাকারবারী থাইল্যান্ডে ইয়াবা চোরাচালান করে নিয়ে আসতো২০০৩ সালে থাকসিন সিনাওয়াত্রার সরকার ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেইয়াবা চোরাচালান, সেবন, বহন এবং বিক্রির দায়ে প্রথম এক বছরেই ক্রস ফায়ারে মারা হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষতার পরের কয়েক বছরে আরও কয়েক হাজারফলাফল ? অবিশ্বাস্য ভাবে কমে গেছে ইয়াবার চোরাচালান, বহন, বিক্রি এবং ব্যবহারতবে এর ফলে চোরাই বাজারে এই নিষিদ্ধ মাদকের দাম কয়েকগুন বেড়ে গেছে থাইল্যান্ডে কড়াকড়ি আরোপের পর ইয়াবার নতুন বাজার হয়ে যায় বাংলাদেশ
আমার ধারণা, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর প্রায় ৫০ লক্ষ থেকে এক কোটি পিস ইয়াবার চালান আসেশুনেছি, পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্রে (মিয়ানমারে) প্রতিটি ট্যাবলেট এর দাম আনুমানিক ৪০ ৫০ টাকা কিন্তু ঢাকায় খুচরা বাজারে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছেবাংলাদেশে প্রধানত লাল, কমলা এবং সবুজ রং এর ট্যাবলেট আসেপ্রতিটি ট্যাবলেট এ ইংরেজী ‘R’ অথবা ‘WY’ খোদাই করা থাকেরং দেখে বোঝা যায় তার মান কেমনচালান বেশী এলে ২৫০ টাকায়ও পাওয়া যায় এই মরণ নেশার ট্যাবলেটপ্রধান ক্রেতা মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সহ অন্যান্য পাবলিক- প্রাইভেট কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীএর বাইরে চাকুরী ও পেশাজীবি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কে নেই এই তালিকায়? আসক্ত অনেকেই আবার এর বিক্রেতাও বটেপ্রতিদিন কোনমতে ১০ ২০ টা ট্যাবলেট বিক্রি করতে পারলে নিজের হাতখরচ আর নেশার টাকাটা চলে আসেইন্টারনেটে পড়েছি, পাশাপাশি আরেক আসক্ত আমাকে বলেছেন যে, নেশার জগতে এই ইয়াবা এলিট শ্রেণীর মাদক ফেন্সিডিল আর হেরোইন এখন সেকেলে ব্যাপার যা ব্যবহার করে নিম্ন আয় এবং শ্রেণীর নেশাখোররাধনী আর অভিজাত শ্রেণীর মূল আকর্ষন ইয়াবা৩১ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারী (ভ্যালেন্টাইন্স ডে) কিংবা হালে ১লা বৈশাখে পার্টি পিল হিসেবে ইয়াবা বেশ ভালো কদর পাচ্ছে২০১০ সালের পূর্বে ঢাকা ও অন্যান্য কয়েকটি শহরের মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে যারা আসতেন তাদের ৮০% ছিল হেরোইন আসক্ত২০১৪ সালে সেই অবস্থানটি দখন করে নিয়েছে ইয়াবাইয়াবার কার্যকারীতা থাকে অনেকক্ষন, এটি বহনে সুবিধা এবং লাভজনক, তাই দিন দিন বাড়ছে এর কদর

ঢাকায় অন্ততঃ ২০ জন পাইকার রয়েছেএরা নিজেদের মধ্যে অঘোষিতভাবে এলাকা ভাগ করে নিয়েছেনপারতঃ পক্ষে কেউ অন্যের এলাকায় হস্তক্ষেপ করেন নাতাদের রয়েছে অনেক বাঁধা কাস্টমার এবং নিজস্ব খুচরা বিক্রেতাকিছু কিছু খুচরা বিক্রেতাকে মোবাইলে অর্ডার দিলে আপনার বাসা অথবা কর্মক্ষেত্রে, কলেজে অথবা ভার্সিটিতে এরা ট্যাবলেট পৌঁছে দেয়তবে সেজন্য কমপক্ষে ১০টির অর্ডার দিতে হয়আসক্তদের মধ্যে একটা কমিউনিটি ফেইথ বা পারস্পরিক বিশ্বাস কাজ করেএলাকা ভিত্তিতে সবাই সবাইকে মোটামুটি চেনে জানে, কিন্তু কেউ কারো কথা অন্যকে বলে নাসপ্তাহে দুইবার বড় চালান আসে বলে শুনেছিআর খুচড়া চালান আসে প্রতিদিনহাজারে হাজারনাফ নদী পথে আর নৌকায়, ট্রলারে আসেকিছু আসে অরক্ষিত সীমান্ত পার হয়েইদানিং মায়ানমার সরকার সীমান্ত জুড়ে কাঁটা তারের বেড়া দেয়াতে সীমান্ত দিয়ে আসাটা দুস্কর হয়ে গেছেতাই বেশী আসছে নদী পথেবেশীরভাগ রাতের বেলায়অপারের মংডু থেকে এপারে টেকনাফতারপর টেকনাফ থেকে বাসে, ট্রাকে, ট্রলারে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে টেম্পো সাইকেল রিক্সায় কক্সবাজার, তারপর আবার বাসে ট্রেনে অথবা বিমানে করে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায়পথে অনেক কিছু ম্যানেজ করা থাকেখুচরা চোরাচালানী যারা তাদেরটা কিনে নেয় কিছু বড় ঘাট মালিক (সিন্ডিকেট)মূল বাহকের পিছু পিছু ২-৩ জনের একটা ছায়া দল থাকে যারা বাহককে পাহারা দেয় এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেঅনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও এ পর্যন্ত মাত্র একজন ক্রস ফায়ারে মারা গেছেসম্প্রতি বিজিবির সাথে বন্দুক যুদ্ধে আহত হয়ে ধরা পড়েছে কয়েকজনমূল ব্যবসায়ীরা সব সময় আড়ালেই থেকে গেছেআজ (২২ এপ্রিল ২০১৪) সুপারির খোসায় ভরে ইয়াবা আনার সময় টেকনাফে ধরা পড়েছে একজনযা ধরা পড়ে সেটা প্রকৃত চোরাচালানের মাত্র ৫০ ভাগের এক ভাগ হতে পারে
ইয়াবা কি তাহলে গিলে খাচ্ছে আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতিকে? নৈতিক অবক্ষয়ের কথা বাদ দিলামআইন শৃংখলার ব্যপক অবনতির পেছনেও সরাসরি দায়ী এই ইয়াবাগত বছর ইয়াবা আসক্ত মেয়ে খুন করেছে তার বাবা-মাকেকি দুঃসহ নির্মম ঘটনা!! হাজারো ছিনতাই, আর অপরাধের পেছনে চালিকা শক্তি ইয়াবার টাকা সংগ্রহ করার তাগিদতাহলে এটা বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? কেন শক্ত হাতে দমন করা হচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা? কোন রাজনৈতিক কারন কি জড়িয়ে আছে? টেকনাফে জনৈক এমপির ভাই, আত্মীয় স্বজন সহ ১৪ গুষ্ঠি ইয়াবা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছেএছাড়া শত শত খুচরা পাচারকারী আছেকাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন? থাকসিন সিনাওয়াত্রার সরকারের মত গণহারে ক্রস ফায়ারে দেয়া বোধ করি আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়তাহলে কি ইয়াবার হাত থেকে কোনই নিস্তার নেই?
বর্তমান আগ্রাসন রোধ করা না হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমাদের জিডিপির একটা অংশ খেয়ে ফেলবে এই ইয়াবাআশ্চর্যের বিষয় হল, তিস্তার পানি, ছিটমহল কিংবা ভারতের সাথে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে সরকার এবং বিরোধী দল যতটা না সচেতন, ঠিক ততটাই উপেক্ষা মায়ানমারের ইয়াবা নিয়েবিজিবি প্রায় প্রতিটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিএসএফ কে ফেন্সিডিলের আগ্রাসন তথা চোরাচালানের কথা বলে থাকে, কিন্তু নাসাকার সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক খুব একটা হয়ও না, আর হলেও সেখানে ইয়াবা প্রসংগ কখনও উঠেছে বলে আমার জানা নেইমায়ানমার সরকারের সাথেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইয়াবা চোরাচালান একেবারেই অনুপস্থিত
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইয়াবা তথা মাদক চোরাচালানের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিস্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেনটেকনাফ সীমান্তে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কোন কার্যক্রম নেইএত বড় ইয়াবা সিন্ডিকেটকে রুখে দেয়ার মত জ্ঞান, সমন্বিত পরিকল্পনা এবং রিসোর্স আমাদের আছে কি? সরকারের কাছে আমার আবেদন, সর্বশক্তি নিয়োগ করে ইয়াবা প্রতিরোধ করুনপ্রয়োজনে থাইল্যান্ডের মত ব্যবস্থা নিন
আমার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাঃ
টেকনাফ ঘাটে ওপার থেকে (মায়ানমার) যত যাত্রী আসে, তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক ভাবে দেহ এবং সংগে থাকা জিনিষপত্র বিস্তারিত তল্লাশীর মধ্যে আনা হোক
টেকনাফ বাস স্ট্যান্ড হতে ছেড়ে যাওয়া সকল বাস যাত্রীকে বাধ্যতামূলক ভাবে দেহ এবং সংগে থাকা জিনিষপত্র বিস্তারিত তল্লাশীর মধ্যে আনা হোক। (আমি চীনের কুনমিং বাস স্ট্যান্ডে এই ব্যবস্থা দেখেছি)
টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া যে কোন যানবাহনের চালক, হেল্পারকে বাধ্যতামূলক ভাবে দেহ এবং সংগে থাকা জিনিষপত্র বিস্তারিত তল্লাশীর মধ্যে আনা হোকটেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি যানবাহনকে তল্লাশীর আওতায় আনা হোক
যেহেতু খালি হাতে এবং চোখে তল্লাশী সময় সাপেক্ষ, তাই যাত্রী হয়রানী কমাতে টেকনাফে র্যা ব, পুলিশ এবং বিজিবি কে প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করতে দেয়া হোক। (সৌদি আরবে আমি মাদক পাচার বন্ধে প্রতিটি সীমান্ত চেকপোস্টে কুকুর ব্যবহার করতে দেখেছি।)
টেকনাফ থেকে ছেড়ে আসা লোকাল বাস, ভাড়ায় চালিত মাইক্রো বাস এবং তাদের যাত্রী, সকলকে গুনধুম এলাকায় আবারও তল্লাশীর ব্যবস্থা করা হোক
কক্সবাজার বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে আসা সকল বাস, চালক, হেল্পার ও যাত্রীদেরকে তল্লাশীর আওতায় আনা হোককক্সবাজার বিমান বন্দরের প্রতিটি যাত্রীর লাগেজ বিস্তারিত তল্লাশীর আওতায় আনা হোকঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়েতে বেশ কয়েকটি চেক পোস্ট বসিয়ে প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্যে যাত্রীবাহী বাস, পন্য বাহী গাড়ী তল্লাশী করা হোক। (প্রতিটি নয়, হঠা হঠা কিছু গাড়ী)
ইয়াবা পাচার/বহনকারী, মজুত বা সরবরাহকারীকে দেখা মাত্র গুলি করা হোক। (থাইল্যান্ডে ইয়াবা সেবনকারীদেরও গুলি করা হয়েছে, আমি তাদের বাদ দেয়ার কথা বলছি)
ইয়াবা সেবনকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হোকইয়াবা সেবনের সর্বনিম্ন শাস্তি ২ বসরের সশ্রম কারাদন্ড ঘোষনা করা হোক
সারা দেশে ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হোকইয়াবা চোরাকারবারী, সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতা এবং সেবন কারীদের বিষয়ে তথ্য দাতাদের জন্য গোপনীয়তা বজায় রেখে আকর্ষনীর পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হোক
জানি এসবের কিছুই হবে নাতারপরও চাই আমাদের যুব শক্তি বাঁচুকসেই সাথে বাঁচুক দেশের অর্থনীতিসুন্দর হোক আমাদের ভবিষ্যত

Written by

We are Creative Blogger Theme Wavers which provides user friendly, effective and easy to use themes. Each support has free and providing HD support screen casting.

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

© 2013 Effects of Drug Abuse. All rights resevered. Designed by Templateism

Back To Top